ভারতের রাজধানী দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলো ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে গেছে। এছাড়া সেখানকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ‘খুব খারাপ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে। যদিও দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে দূষণবিরোধী বিভিন্ন ব্যবস্থা আগেই নেওয়া হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দীপাবলি উদযাপন হচ্ছে এবং এদিন সকালেই অবস্থা খারাপ হওয়ায় উঠতে শুরু করেছে প্রশ্নও। আজ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, গত কয়েক দিন ধরেই দিল্লির বাতাসের গুণগত মান (একিউআই) টানা খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার গুণগত মান আরও নিচে নেমেছে। তার ওপর এদিনই পালিত হচ্ছে দীপাবলি।
কিন্তু সকালেই যেভাবে ঘন ধোঁয়ার চাদরে ঢেকেছে দিল্লির আকাশ, তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে প্রশাসনের। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দীপাবলির সকালেই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে রাতে পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে?
— ANI (@ANI) October 31, 2024
অবশ্য দিল্লিতে দূষণ ঠেকাতে প্রতিবারই নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়, বিশেষ করে দীপাবলির দিন দূষণের মাত্রা যাতে চরম পর্যায়ে না পৌঁছায়, গত বেশ কয়েক বছর ধরে এই দিনে বিশেষ নজরদারি চালানো হয় ভারতের এই রাজধানীতে।
শব্দবাজি, আতশবাজি বিক্রি, মজুত এবং বানানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এমনকি অনলাইনেও বাজি বিক্রি করা যাবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছে তারা।
— NDTV (@ndtv) October 31, 2024
তবে সবুজ বাজির বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দীপাবলির দিন রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সবুজ বাজি ফাটানোর অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু তারপরেও কি দূষণ কমানো যাবে?
দীপাবলির দিন সকালে দিল্লির বাতাসের গুণগত মান ৩২৮। যা খুব খারাপ পর্যায়ে পড়ে।
সিস্টেম অব এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ (সফর)-এর তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার আনন্দ বিহারে বাতাসের গুণগত মান ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেখানে একিউআই ৪১৯। আনন্দ বিহারের পাশাপাশি, আলিপুর, অশোর বিহার, আয়ানগর, বাওয়ানা, বুরাড়ী, দ্বারকা এবং বিমানবন্দর এলাকায় বাতাসের গুণগত মান খুবই খারাপ।
— ANI (@ANI) October 31, 2024
এছাড়াও জাহাঙ্গীরপুরী, মুন্দকা, নারেলা, ওখলা, প্রতাপগঞ্জ, পাঞ্জাবী বাগ, রোহিনী, আর কে পুরম, বিবেক বিহার, ওয়াজিরপুরেও বাতাসের গুণগত মান অনেকটাই নিচে নেমেছে বলে জানিয়েছে সফর-এর তথ্য।
মূলত একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ২০০ হলে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। অন্যদিকে ২০১ থেকে ৩০০ একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয় এবং ৩০১ থেকে ৪০০ একিউআই স্কোরকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি বৈশিষ্টের ওপর ভিত্তি করে- বস্তুকণা (পিএম-১০ ও পিএম-২.৫), এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন (ও৩)।
বস্তুকণা পিএম-২.৫ হলো বাতাসে থাকা সব ধরনের কঠিন এবং তরল কণার সমষ্টি, যার বেশিরভাগই বিপজ্জনক। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন— প্রাণঘাতী ক্যান্সার এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে পিএম-২.৫। এছাড়া বায়ু দূষণকারী এনও২ প্রধানত পুরোনো যানবাহন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প স্থাপনা, আবাসিক এলাকায় রান্না, তাপদাহ এবং জ্বালানি পোড়ানোর কারণে তৈরি হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শুধুমাত্র বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।