গত সপ্তাহে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসেই ঢালাও দরপতন হয়েছে। এতে গত সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। ঢালাও দরপতনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে এক হাজার কোটি টাকার ওপরে। সেই সঙ্গে কমেছে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ।
গত সপ্তাহে শেয়াবাজারে লেদদেন শুরু হওয়ার আগেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে সরকার শিল্প গ্যাসের মূল্য বাড়াচ্ছে। এমন গুঞ্জনে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (১৩ এপ্রিল) শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। শেয়ারবাজারের লেনদেন শেষ হওয়ার পর ওইদিন শিল্প ও ক্যাপটিভের নতুর সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিএসইসি)।
গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর পর ১৪ এপ্রিল (সোমবার) পহেলা বৈশাখের ছুটি থাকায় শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়নি। পরের তিন কার্যদিবস মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। এতে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মোটামুটি বড় দরপতন দেখতে হয়।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭৭টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯৯টির। আর ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭০ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকায়। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা বা দশমিক ১৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ২ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। এতে দুই সপ্তাহের টানা পতনে বাজার মূলধন কমলো ৩ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা।
বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে প্রধান মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স গত সপ্তাহে কমেছে ১০৭ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৩ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা দশমিক ২৭ শতাংশ।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় পতন হয়েছে ডিএসই শরিয়াহ ও ডিএসই-৩০ সূচকের। ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ২৯ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৩ দশমিক ২১ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৯ শতাংশ।।
আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ৫২ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৪ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৪২ শতাংশ।
গত সপ্তাহের দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৯৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৮৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা বা ১৮ দশমিক ১১ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৩১ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিচ হ্যাচারির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ৬ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মার।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- উত্তরা ব্যাংক, এসিআই লিমিটেড, শাহিনপুকুর সিরামিক, ইস্টার্ণ লুব্রিকেন্ট, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ম্যারিকো বাংলাদেশ এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক।