হাসিনার ‘ইলিশ কূটনীতি’ অধ্যায়ের সমাপ্তি, আবার ধাক্কা খেল ভারত

দুর্গাপূজা ঘিরে প্রতি বছরে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। তবে গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইলিশ রপ্তানি নিয়ে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

ভারতের শেখ হাসিনার ‘ইলিশ কূটনীতি’ অনেক পুরোনো। উৎসবের মৌসুমে বিশেষভাবে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিতেন তিনি। তবে আসছে অক্টোবরে দুর্গাপূজা উপলক্ষে স্বাদের ইলিশ পাচ্ছে না ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা। কারণ এরইমধ্যে বাংলাদেশ ভারতে ইলিশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

বিবিসিকে মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘এমন উদ্যোগের লক্ষ্য হলো দেশের মানুষদের কাছে আগে এই মূল্যবান মাছকে সহজলভ্য করা।

ফরিদা আখতারের ভাষায়, ‘নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে ভারতে এখনও প্রচুর মাছ পাচার হচ্ছে। এবার আমরা ইলিশকে সীমানা পার করতে দেব না।’

ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হলেও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ইলিশের বাজারমূল্য শুধু ধনী ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে এই মাছ কেনা সামর্থ্য নেই বললেই চলে। শেখ হাসিনা সরকার দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ইলিশ রপ্তানিকে ‘উপহার’ হিসেবে উল্লেখ করে এসেছে। কিন্তু এবার অন্তবর্তীকালীন সরকারের নীতি, আগে দেশের চাহিদা মিটাতে হবে।

ফরিদা আখতার বলেন, ‘আগের সরকার দুর্গাপূজার সময় নিষেধাজ্ঞা তুলে দিত। তারা এটিকে উপহার বলে আখ্যায়িত করত। আমি মনে করি এবার আমাদের উপহার দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ ভারতে বিপুল পরিমাণে ইলিশ মাছ রপ্তানি করলে আমাদের মানুষ এই মাছ খেতে পারবে না।’

এদিকে ইলিশ নিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থানের মধ্যেই মঙ্গলবার হিন্দুস্তান টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে ভারতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে দুর্গাপূজায় ইলিশ আমদানির করার আগ্রহ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।

হিন্দুস্তান টাইমসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫ বছর ধরে ইলিশ আমদানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। এবারও সেই রীতি মেনে ভারতে ইলিশ পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে আবেদন করেছে ফিস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন।

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের চিঠিতে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের পর থেকে প্রতিবছর গড়ে ৫ হাজার টন ইলিশ বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হচ্ছিল। তবে ২০১২ সালের পর থেকে রপ্তানি অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার গত পাঁচ বছর ধরে কেবল দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ যাচ্ছিল।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির সুযোগ চাওয়া হয় চিঠিতে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কলকাতার ব্যবসায়ীদের একটি আগ্রহপত্র মন্ত্রণালয়ে এসেছে। তবে এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়নি।

ইলিশ নিয়ে গত ১৫ বছরে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি ভারতকে। তবে ঢাকার রাজনীতিতে এ বিতর্ক রয়েছে, ভারতকে ইলিশ পাঠিয়ে কোনো স্বার্থ হাসিল করতে পারেনি বাংলাদেশ। তিস্তা পানিবন্ঠন থেকে শুরু করে সীমান্ত হত্যা, কোনো ইস্যুতেই ঢাকার স্বার্থ গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি ভারত।

শেষ পর্যন্ত এবার দুর্গাপূজায় ইলিশ না পাঠানোর সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অটল থাকলে শেষ হতে পারে ‘ইলিশ কূটনীতি’ অধ্যায়।