২০২৫ সালে রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমণ করে সারা পৃথিবাকে চমকে দেয়। আর এটা দেখে পৃথিবীর সকল দেশ তাদের নিরাপত্তার জন্য ব্যাপকহারে সামরিক বাজেট বৃদ্ধি করতে থাকে। এবং নতুন নতুন অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধবিমান, যুদ্ধ ট্যাংক ইত্যাদি যুক্ত করতে থাকে তাদের সেনাবাহিনীতে। এর ফলে সারা পৃথিবীতে অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা আরো বেড়ে যায়। সেই সাথে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ১০ টি দেশের রেংকিংয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আসে।
যে সকল দেশ গত বছর টপ টেন র্যাংকিং এ ছিল না তারা টপ টেনে জায়গা করে নিয়েছে। ২০২৫ সালে যারা শক্তিশালী ১০ এর তালিকায় ছিল তারা অনেকেই এখন তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি।
২০২৫ সালের বিশ্বের শীর্ষ ১০টি শক্তিশালী দেশ হলো: ১. যুক্তরাষ্ট্র, ২. চীন, ৩. রাশিয়া, ৪. যুক্তরাজ্য, ৫. জার্মানি, ৬. জাপান, ৭. দক্ষিণ কোরিয়া, ৮. ফ্রান্স, ৯. ভারত এবং ১০. ব্রাজিল।
এই তালিকাটি সাধারণত সামরিক শক্তি, অর্থনৈতিক প্রভাব, রাজনৈতিক ক্ষমতা, আন্তর্জাতিক জোট এবং প্রযুক্তির মতো বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।
১.যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। প্রযুক্তি, অর্থব্যবস্থা (ফিন্যান্স), বিনোদনসহ বহু খাতে দেশটির নেতৃত্ব জারি আছে। বাইডেন প্রশাসন অবকাঠামো উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উদ্যোগে মনোযোগী হয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্বের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানির অবস্থান এই দেশে। এটা বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পোক্ত অবস্থানকে সহায়তা করছে।
২.চীন
চলতি বছর বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীন। দেশটির ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ নামে পরিচিতি উদ্যোগটি ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে। এতে অংশ নেওয়া দেশের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য স্থল ও সমুদ্রপথে এশিয়াকে আফ্রিকা ও ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বাণিজ্য বাড়ানো।
এর বাইরে চীন প্রযুক্তি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করছে, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও পঞ্চম প্রজন্মের সেলুলার নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভ–জিতে। প্রযুক্তিতে এক বিশ্বনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে দেশটি।
৩.রাশিয়া
বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ও সামরিক সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে রাশিয়া বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। দেশটি তার মহাকাশ কর্মসূচির ব্যাপারেও মনোযোগ দিচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি মহাকাশ অভিযান শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভেনেরা-ডি ভেনাস ল্যান্ডার। রুশ অভিযানগুলোর লক্ষ্য চাঁদ এবং মহাকাশের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো অনুসন্ধান করা, যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের আরও বিশদ ধারণা পেতে সাহায্য করবে।
৪.যুক্তরাজ্য
নতুন অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি ও আলাপ-আলোচনার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে। পাশাপাশি প্রযুক্তি শিল্পেও দেশটি এগিয়ে যাচ্ছে। লন্ডন নবীন উদ্যোগের (স্টার্টআপ) প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এই উদ্যোগগুলো নানা খাতে উদ্ভাবনী সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে, যা যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
৫. জার্মানি
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবুজ জ্বালানি উদ্যোগগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছে জার্মানি। দেশটি প্রথাগত জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহার বাড়ানো এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর দিকে মনোযোগী হয়েছে। এ ছাড়া শিল্পোৎপাদন, স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা খাতে ডিজিটাল রূপান্তরেও মনোযোগ দিচ্ছে দেশটি। উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই এটা তারা করছে।
৬. জাপান
গাড়ি ও ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত জাপান বিশ্বের চতুর্থ-বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। প্রযুক্তির আগামী ধারায় নিয়ামক ভূমিকা রাখতে দেশটি এখন [কম্পিউটারের] চিপ উৎপাদন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে। তবে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং মোট জনসংখ্যা হ্রাসের চাপে আছে এই দেশ। এর ফলে একদিকে যেমন মেধার সংকট দেখা দিচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে মজুরি বাড়ানোর চাহিদা তৈরি হচ্ছে।
৭. দক্ষিণ কোরিয়া
প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন খাতে দক্ষিণ কোরিয়া এ বছরও এক বিশ্বনেতা হয়ে রয়েছে। দেশটিতে রয়েছে বিশ্বের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানি, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে এর শক্তিশালী অবস্থানকে সহায়তা করছে। সবুজ জ্বালানি উদ্যোগ সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়া কার্বন নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াচ্ছে।
৮. ফ্রান্স
ডিজিটাল রূপান্তর ও সবুজ জ্বালানি উদ্যোগগুলোতে মনোযোগ দিচ্ছে ফ্রান্স। দেশটি তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক করা এবং জ্বালানি হিসেবে নবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি ও আইন-বিধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে দেশটি এই জোটের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখছে।
৯. ভারত
ভারত একটি শক্তিশালী দেশ। সামরিক শক্তিতে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে ভারতের নাম উল্লেখযোগ্য। ২০২৫ সালের গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স অনুসারে, সামরিক শক্তিতে বিশ্বের শীর্ষ চারটি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান।
১০. ব্রাজিল
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। ফুটবলের দেশ বললে চিনতে আরো সহজ হয়। ১৫০০ থেকে ১৮২২ সাল পর্যন্ত দেশটি একটি পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল। ১৮২২ সালে এটি স্বাধীনতা অর্জন করে। দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক শান্তিপূর্ণভাবে উপনিবেশ থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে উত্তরণ ঘটে ব্রাজিলের। এ সময় দেশে কোনো রক্তপাত বা অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেনি।