২০৩০ সালে সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা দাঁড়াবে ১০ মিলিয়ন টিইইউস

২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর সক্ষমতা দাঁড়াবে ১০ মিলিয়ন টিইইউস। বৈশ্বিক বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাণিজ্য সহযোগিতা এবং লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

রোববার (৩০ জুন) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে লজিস্টিক খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি শীর্ষক সেমিনারে ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুনঃ ব্যাংকিং খাত বর্তমানে সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে: ডিসিসিআই সভাপতি

সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয় ডিসিসিআই মিলনায়তনে। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়) শেখ মইনউদ্দিন। এছাড়াও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন-এর চেয়ারম্যান সলিম উল্লাহ এবং বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)-এর চেয়ারপার্সন আবুল কাসেম খান এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা বলেন, লজিস্টিক অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ওয়ার হাউজে সফলতার জন্য ডিজিটালাইজেশন প্রয়োজন ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো দরকার।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, গত কয়েক দশকে আমাদের বেসরকারিখাতের নেতৃত্বে পরিচালিত অর্থনৈতিক অগ্রগতি বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত এবং কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দেশ ও অঞ্চলের বাজারের ওপর আমাদের রপ্তানি পণ্যের নির্ভরশীলতা ঝুঁকির বিষয়।

সেই সঙ্গে প্রতিবছর প্রায় ২২ লাখ নতুন মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির বিষয়টিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এমন বাস্তবতায় আমাদের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণে বেশি মনোযোগী হওয়ার ওপর তিনি জোরারোপ করেন।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাণিজ্য সহযোগিতা এবং লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। লজিস্টিকের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি উল্লেখ করেন, কেবলমাত্র এখাতে যদি ২৫% ব্যয় হ্রাস করা যায়, তাহলে প্রায় ২০% রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব, সেই সঙ্গে পরিবহন ব্যয় ১% হ্রাস করা সম্ভব হলে ৭.৪% রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব। পরিশেষে তিনি বলেন, জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সেক্টর ডেভেলপমেন্ট রোডম্যাপ মাস্টারপ্ল্যান একান্ত আবশ্যক।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, লজিস্টিক পারফরম্যান্স ইনডেক্স ২০২৩-এর তথ্য মতে লজিস্টিক খাতে বিশ্বের ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮, বন্দরে যানজট, কাস্টমস প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুপস্থিতি ও অপ্রতুল অবকাঠামো আমাদের আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি সামগ্রিক ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াকে প্রতিনিয়ত ব্যাহত করছে।

তিনি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯২% হয়ে থাকে। জিডিপিতে বন্দর দুটোর অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ। এমতাবস্থায় উল্লিখিত বন্দরসহ দেশের সব রেল, স্থল, নৌ, সামুদ্রিক ও বিমান বন্দরগুলোসহ সার্বিক লজিস্টিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি এবং এ ক্ষেত্রে কালক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। তা না হলে আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ব। সেই সঙ্গে অ্যাসআইকোডা এবং ন্যাশনাল সিঙ্গেল ইউন্ডো অতিদ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোরারোপ করেন তাসকীন আহমেদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মইনউদ্দিন বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যে আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে আমাদের সড়ক, রেল, নৌ, বিমান ও সমুদ্র বন্দর এবং ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ের সমন্বয়ে একটি বহুমাত্রিক পরিবহন ইকোসিস্টেম প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

তিনি বলেন, লজিস্টিক খাতের উন্নয়নে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো আমাদের কোনো দীর্ঘমেয়াদি বৃহৎ মাস্টারপ্ল্যান অনুপস্থিতি। তিনি জানান, আগামী ২৫-৫০ বছরের জন্য উপযোগী একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। নীতি প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারার কারণে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই গৃহীত নীতিমালা হতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।

ধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ