৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কৃতিত্ব কাউকে দাবি না করার অনুরোধ জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, এর সব কৃতিত্ব আল্লাহর। আমরা কেউ যেন ক্রেডিট দাবি না করি যে, এটা ওলামায়ে কেরাম করছে, এটা ছাত্রশিবির, এটা জামায়াতে ইসলামী, এটা বিএনপি বা অমুক দল করেছে। এ ধরনের কথা বলা সংগত হবে না।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় মুফাসসির (যিনি পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যা করেন) সম্মেলনে এ অনুরোধ জানান তিনি। এর আগে, মুফাসসিরদের অনেকে ৫ আগস্টের পরিবর্তনে আলেম সমাজের অবদানের কথা উল্লেখ করে বক্তব্য দেন।
জামায়াত আমির বলেন, আমি যদি জিজ্ঞাসা করি, আগস্ট মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত কেউ কি চিন্তা করেছিলেন, এমন একটা ঘটনা ৫ তারিখে ঘটবে। দুনিয়ার কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী চিন্তা করেছিলেন? যারা আমাদের দেশে ষড়যন্ত্রের জাল সৃষ্টি করেছিল, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবস্থান নিয়েছিল, তারাও কি টের পেয়েছিল, পায়নি। আল্লাহ তার কল্পনা এবং বিপরীত সব অপচেষ্টা-অপকৌশলকে একদিকে রেখে তারই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করেছেন।
তিনি বলেন, এটা (পরিবর্তন) আমাদের চেষ্টার ফসল নয়। চেষ্টা যদি কিছু থাকে, সেটিও আল্লাহর দান। আমরা তো সাড়ে ১৩ বছরে দফায় দফায় চেষ্টা করেছি, রক্ত দিয়ে চেষ্টা করেছি, তাদের সঙ্গে সামনে নেমে লড়াই করে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সফলতা তো আমাদের হাতে ধরা দেয়নি। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, শুধু আমাদের চেষ্টায় হবে না, আল্লাহর দরবারে যখন যার যার চেষ্টা মকবুল ও মঞ্জুর হয়ে যাবে, তখনই পরিবর্তন হয়ে আসবে।
রেছে আপনাদেরও মাথা ধরবে, তৈরি থাকুন। কিন্তু আমরা বোঝাতে পারিনি। তারপর সবাই আমরা ধরা খেয়েছি দফায় দফায়। সর্বশেষ তাণ্ডব ছিল ২০২৪ সালে।
তিনি আরও বলেন, পরিবর্তনের পর আমরা আমাদের ভাইদের অনুরোধ জানিয়েছিলাম, শান্ত থাকুন দেশকে তার মূল জায়গায় ফিরিয়ে আসতে সাহায্য করুন। আল্লাহর তাআলার শুকরিয়া, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের কোথাও আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো অভিযোগ নেই। কোথাও কারো সম্পদের ওপর আমাদের কুনজর পড়েছে, এমন অভিযোগ আসেনি। কোথায় দখল-চাঁদাবাজির করে মানুষকে অতিষ্ঠ করে তোলা হয়েছে, এমন অভিযোগও আসেনি।
৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনে ওলামায়ে কেরামের অবদানকে উপেক্ষা না করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, এই সরকার জনগণের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তারা প্রার্থী হয়ে এখানে আসেননি। কাজেই বৃহত্তর জনগণের চেতনা তাদের উপলব্ধি করতে হবে এবং সে অনুযায়ী সম্মান দেখাতে হবে। আশা করি তারা পারবে, দোয়া করি তাদের যেন সেই সদিচ্ছা থাকে। কেউ যেন তাদের ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের চিন্তা না করেন। যদি কেউ ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের চিন্তা করেন, তাহলে পতিত স্বৈরাচারকে জনগণ ছেড়ে দেয়নি, আপনাদেরও ছেড়ে দেবে না। আর আপনারা যদি জনগণের চেতনাকে ধারণ করে এগোন, ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাত আপনাদেরর পাশে থাকবে।’
এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশ মজলিসুল মুফাসসিরিনের সভাপতি মাওলানা আবদুল আবদুল হামিদ। সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম খান, সাইফুল আলম খান, নুরুল ইসলাম বুলবুল ও খলিলুর রহমান মাদানি।